শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃপাবনার মাঠে মাঠে আমন ধান কাটা ও মাড়াই চলছে পুরোদমে। টানা খরা অতিবৃষ্টি সহ নানা প্রতিকুলতা কাটিয়ে সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এবার আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ধান চাষের উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি। হাট-বাজারে ধান বিক্রি করতে তাদের প্রতিমণে চার কেজি ধলতা দিতে হয়। এতে বাজার দর কম হলে লোকসান গুনতে হয় বলে চাষিরা জানিয়েছে।
চাষিরা বুক ভরা আশা নিয়ে পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করলেও দাম নিয়ে তারা নিরাশ হচ্ছেন। চাষিরা বলছেন, এবার সার সঙ্কট ও টানা খরায় এলাকা ভেদে ফলন কম হয়েছে। এর ওপর উৎপাদন খরচ অনুযায়ী তারা দাম পাচ্ছেন না। তারা বলছেন, ধান কত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এটা হিসাব করার আগে উৎপাদন খরচ হিসাব করা দরকার। এতে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য কৃষক পাচ্ছে কি না তার বাস্তব চিত্র পাওয়া যাবে বলে তারা জানিয়েছেন।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে জেলায় বিনা-৭, বিনা-৮, বিনা-৪, বিনা-১০, ব্রি-ধান-৩২, ৩৩ বিআর-১১, ব্রি ধান-৪৯, লাল পাইজাম, কালা পাইজাম, স্বর্ণা, ধানী গোল্ড, স্বর্ণা নেপালী, লেমবু ও বিন্নি জাতের আমন ধানের আবাদ হয়েছিল। হেক্টর প্রতি ধানের ফলন চার দশমিক পাঁচ ও চালের ফলন দুই দশমিক সাত মেট্রিক টন ধরা হয়। চলতি মওসুমে ৫৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৫ টন। মওসুমের শুরুতেই রোপা আমন ধান কাটতে পারায় মহা খুশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। তারা ধান কাটার পর একই জমিতে রবি ফসল আবাদের প্রস্তÍতি নিচ্ছেন।
চাষিরা জানিয়েছেন, চলতি মওসুমে আমন ধান ভালো ফলন ও চিটা কম হয়েছে। নতুন আমন ধান মানভেদে প্রতি মণ এক হাজার ৩৫০ এক হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চিকন ও সুগন্ধি জাতের ধানের দাম প্রতি মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি। তবে এ দামে ধান বিক্রি করে চাষিদের আশানুরুপ লাভ হচ্ছে না। তারা জানিয়েছেন, জমি চাষে জ্বালানি খরচ বেড়েছে। সারের দাম, শ্রমিকের দাম, কীটনাশকের দাম বেড়েছে। এমনকি মাড়াইযন্ত্র ডিজেলচালিত হওয়ায় ধান মাড়াইয়ের খরচ বেড়েছে। এতে করে চাষির খরচ যে হারে বেড়েছে সে অনুপাতে ধানের দাম বাড়েনি। এজন্য তারা খুব কমই লাভের মুখ দেখছেন।
ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা গ্রামের ধানচাষি রমজান মোল্লা বলেন, এবার ধান আবাদে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কারণ ধান চাষে সেচ খরচ বেড়েছে। সার-কীটনাশকের দাম, শ্রমিক মজুরি বেশি। এমনকি ধান মাড়াই মেশিনের মজুরি বেড়েছে। বর্গাচাষি জালাল খাঁ বলেন, তিনি এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসান হয়েছে। তাই সেই জমি ছেড়ে দিয়েছেন।
পাথালিয়াহাট গ্রামের চাষি রজব আলী জানান, ধান আবাদ করে লাভ খুব কমে গেছে। সব কিছুতেই খরচ বেড়েছে। সে অনুপাতে ধানের দাম বাড়েনি। ধান মাড়াই যন্ত্রের মালিক সাইদুল জানান, গতবছর তারা প্রতি মণ ধান মাড়াই করে আড়াই কেজি ধান নিয়েছেন। এবার নিচ্ছেন প্রতি মণে ৪ কেজি। এতেও তাদের পোষায় না। কারণ জ্বালানি তেলের খরচ বেড়ে গেছে। কৃষি শ্রমিক ছালাম বলেন, তারা অন্য গ্রাম থেকে ধান কাটতে মনমথপুর এসেছেন। তারা পাঁচজন প্রতিদিন ৭৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন। হাট-বাজারে ধান বিক্রিতে প্রতিমণে চার কেজি ধলতা দিতে হয়। এতো খরচের পর তারা লাভের মুখ খুব কমই দেখছেন।
শনিবার সকালে (২৩ নভেম্বর) বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুর হাটে গিয়ে জানা যায়, আমন ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা আর চিকন মানের ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ টাকা দরে। চাষিরা জানান, গত বছর এ সময়ে মোটা ধানের দর ছিল এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা মণ। মোটামুটি চিকন জাতের ধান ছিল প্রতি মণ এক হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এক বছরে চাষাবাদে যে খরচ বেড়েছে সে অনুপাতে দাম বাড়েনি। তারা বলছেন, অনেকের ধারণা ধানের দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু তারা হিসাব করছে না, এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে খরচ কত বেড়েছে। জমি লিজ নেয়া চাষি জাভেদ মিয়া জানান, জমির মালিককে বছরে লিজ বাবদ দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। গড়ে প্রতিমণ ধান এক হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করলেন। এ দামে তাদের লাভ তো দরের কথা, লোকসান গুনতে হয়েছে।
এবার জেলায় আমনের ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা খুশি। তারা আমন ধান কেটে রবি ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।