শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃনদীর তীব্র স্রোতে বালু প্রবাহ বেড়ে যাওয়া ও অস্বাভাবিক মাত্রায় পানি কমায় যমুনা-পদ্মায় ডুবোচরসহ নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধরন করেছে। ফলে কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে ফেরী চলাচল আবারও বন্ধ হয়ে গেছে। দৌলতদিয়া কার্গোজাহাজ থেকে রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী লাইটারেজ করে নগরবাড়ি ও বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে নগরবাড়ি-বাঘাবাড়ি বন্দরে আমদানি রফতানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। শত শত শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছে।
এদিকে বিআইডাব্লিউটিএ নৌচ্যানেল সচল রাখার জন্য গত তিন মাস ধরে ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তারা ড্রেজিংকৃত স্পয়েল নদীতেই ফেলছে। এরফলে স্রোতে টানে পলি-বালু ভাটিতে জমা হয়ে আবারো ডুবোচরের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে শুধু টাকার অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বিআইডাব্লিউটিএর অপরিকল্পিত ড্রেজিং দায়ী বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বাঘাবাড়ী নৌবন্দর নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, আরিচা-বাঘাবাড়ী নৌপথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলাসহ ১৯ জেলায় জ্বালানী তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মাধ্যম। এ নৌপথে জ্বালানী তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বলানী তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এ নৌ চ্যানেলের মোহনগঞ্জ থেকে আরিচা পর্যন্ত মারাত্মক নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, বাঘাবাড়ী বন্দর নৌচ্যানেল যমুনা নদীতে গত অক্টোবরের শুরু থেকে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এই সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারন করেছে। জ্বালানী তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য পানির গভীরতা প্রয়োজন ১০ থেকে ১১ ফুট। বাঘাবাড়ী বন্দরের ২৫ কিলোমিটার ভাটিতে কোথাও কোথাও পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ থেকে ৬ ফুট। বিপিসি সূত্র জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে ১০ লাখ লিটার জ্বালানী তেল নিয়ে জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে এসেছে। অক্টোবর মাস থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৪-৫ লাখ লিটারে।
বিসিআইসির বাঘাবাড়ি বন্দরের বাফার গুদাম ইনচার্জ জানান, বাঘাবাড়ী বন্দর রাসায়নিক সার পরিবহনের ট্রানজিট পয়েন্টে। সেখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১৪টি বাফার গুদামে সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটে রাসায়নিক সারভর্তি পূর্ণলোড নিয়ে নগরবাড়ি-বাঘাবাড়ী বন্দরে আসতে পারছে না। বন্দরের ৪০ কিলোমিটার ভাটিতে জাহাজ থেকে সার ছোট ছোট নৌকায় লাইটারেজ করে বাঘাবাড়ীতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে বাফার গুদামগুলোতে আপদকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া পরিবহন ব্যয় জাহাজ প্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা এই নৌপথে পণ্যসমাগ্রী আমদানি রফতানিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, ব্রক্ষপুত্র ও তিস্তা নদীর মিলিত প্রবাহ একসঙ্গে ধারন করে যমুনা নদী প্রবাহমান। তিস্তা ও ব্রক্ষপুত্র নদের পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে যমুনা নদীতে। ফলে যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট প্রকট আকার ধারন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বিআইডবিউটিসি আরিচা অফিসের ডিজিএম মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, ফেরী চলাচলের জন্য ৮ থেকে ৯ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন হয়। সেখানে এই নৌ চ্যানেলে পানির গভীরতা রয়েছে মাত্র ৬ থেকে ৭ ফুট। এই নব্যতা সঙ্কটে ফেরী চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বিআইডাব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহম্মেদ বলেন, আরিচা ডিভিশনের আন্ডারে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত আমাদের নৌরুট। প্রতিদিন এক থেকে দেড় ফুট করে অস্বাভাবিক মাত্রায় পানি কমছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার পানি হৃাসের পরিমান অনেক বেশি। এেেত নব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারন করেছে।
তিনি বলেন, মোহনগঞ্জ থেকে আরিচা পর্যন্ত পানির গভীরতা রয়েছে ৬ থেকে ৭ ফুট। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানীতেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বিআইডাব্লিউটিএ কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাত এই নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য পাঁচ’টি ড্রেজার পলি অপসারন করছে। এদিকে বালুর প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ড্রেজিং করার পর ভাটিতে বালু জমে ডুবোচরগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। ড্রেজিং করে পলিমাটি নদীতে ফেলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে শুধু টাকার অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।