• December 24, 2024, 1:15 am
শিরোনাম

খাঁজকাটা ……

অনলাইন ডেস্ক 16 Time View
Update : মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৯, ২০২৪
খাঁজকাটা ......

ভীষণ গরম পড়েছে আজ। সবাই ঘেমে নেয়ে অস্থির। ক্লাসরুমের বাইরের দিঘিটা হাতছানি দিয়ে ডাকছে শিক্ষককে। যত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাওয়া যায়। তাই আজ পড়াশোনা বাদ দিয়ে তিনি ক্লাসের সবাইকে বললেন রচনা লিখতে। যার যা মনে আসে, সে তার ইচ্ছেমতো ওই বিষয়ে রচনা লিখতে পারবে। সবাই লিখতে শুরু করল। শিক্ষক আরাম করে চেয়ারে বসে একটা খাতা দিয়ে বাতাস করছেন নিজেকে।
একে একে সবাই খাতা জমা দিল। শিক্ষক সবারটা দেখলেন। কেউ লিখেছে গরু, কেউ বিদ্যালয়, কেউ বা আমাদের গ্রাম, বাজার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। এদের মধ্যে এক ছেলে রচনা লিখেছে কুমির নিয়ে। অন্য রকম বিষয় দেখে নড়েচড়ে বসলেন শিক্ষক। ছেলেটা লিখেছে কুমির উভচর প্রাণী।

কুমিরের আছে দুটি চোখ, একটি নাক, দুটি কান ও চারটি পা। আর বিশাল একটা মুখ এবং দাঁতগুলো ভীষণ ধারালো। কুমিরটির সারা দেহে খসখসে শক্ত চামড়ার আবরণ রয়েছে। আর আছে বিশাল লম্বা একটি লেজ। সেই লেজে আছে খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা···

শিক্ষক হুঙ্কার দিলেন-এই বদমাশ, এগুলো কী লিখেছিস! এত খাঁজকাটা কেন? জবাবে ছাত্র বলল, ‘স্যার, অনেক লম্বা লেজ তো, তাই অনেক বেশি খাঁজকাটা।’

শিক্ষক বললেন, ‘হয়েছে, তোর আর কুমির নিয়ে রচনা লিখতে হবে না। কালকে গরু নিয়ে রচনা লিখে আনবি।’

পরদিন ছাত্র ২০ পৃষ্ঠার একটা রচনা এনে শিক্ষককে দিল। শিক্ষক তো অবাক! গরু নিয়ে ছেলেপেলেরা আধা পৃষ্ঠা লিখতে পারে না, আর এই ছেলে ২০ পৃষ্ঠা লিখে ফেলেছে! পড়তে শুরু করলেন তিনি···
গরু একটি গৃহপালিত প্রাণী। তার দুটি চোখ, দুটি কান, চারটি পা, দুটি শিং ও একটি লেজ আছে। গরু অনেক নিরীহ একটি প্রাণী। আমাদের একটি গরু ছিল, তার গায়ের রং ছিল ধবধবে সাদা। রোজ বিকেলে রাখাল তাকে ক্ষেতে চরাতে নিয়ে যেত। একদিন রাখাল তাকে নদীর ধারে চরাতে নিয়ে গেল। হঠাৎ সেই নদী থেকে একটি কুমির উঠে এসে গরুটিকে কামড়ে নদীতে নিয়ে গেল। সেই কুমিরের ছিল দুটি চোখ, দুটি কান ও চারটি পা। তার ছিল বিশাল একটা মুখ, তার দাঁতগুলো ছিলো ভীষণ ধারালো। কুমিরের সারা দেহে ছিল খসখসে শক্ত চামড়া, আর ছিল বিশাল লম্বা একটা লেজ। সেই লেজে ছিল খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা···
এরপর শিক্ষক যতই পৃষ্ঠা উল্টান সব পৃষ্ঠাতেই খাঁজকাটা লেখা। চিৎকার দিয়ে ডাকলেন তাকে। ‘হতভাগা, কী লিখেছিস এসব’?!

জবাবে ছাত্র বলল, ‘স্যার, অনেক বড় লেজ তো, অনেক বেশি খাঁজ।’ শিক্ষক কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর বললেন, “ঠিক আছে, তুই কালকে ‘আমাদের বাড়ি’ নামে একটা রচনা লিখে আনবি।”

যেই কথা সেই কাজ। পরদিন ছাত্র বিপুল উদ্যমে ৩৪ পৃষ্ঠার রচনা লিখে আনল। শিক্ষকের হাতে দিতেই তিনি শঙ্কিত দৃষ্টিতে ছাত্রের দিকে তাকালেন। এবার পৃষ্ঠা আরও বেশি, খাতা আরও ভারী, হবেই বা না কেন! একটা বাড়ির ওজন তো আর কম নয়। খাতার মধ্যে আমাদের বাড়ি লিখলে তার ওজন তো বেশি হবেই। খুশি মনে পড়তে শুরু করলেন তিনি।

আমাদের বাড়িটি গ্রামের মধ্যমণি। টিনের চালাঘেরা এই বাড়ির দেয়াল তৈরি হয়েছে মাটি দিয়ে। আমাদের বাড়ির চারপাশে অনেক ফলের গাছ রয়েছে। ফলের মৌসুমে পাকা ফলের মিষ্টি গন্ধে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। আমাদের বাড়িটি ঘিরে সব সময়ই মৃদুমন্দ হাওয়া বয়ে যায়। গতবার বর্ষা মৌসুমে ভীষণ বৃষ্টি হলো। নদীর পানি উপচে বন্যা হয়ে গেল সব জায়গায়। পানি উঠল আমাদের বাড়িতেও। কোমরসমান পানি। সেই পানিতে একদিন সকালে দেখা গেল মস্ত এক কুমির। সেই কুমিরের ছিল দুটি চোখ, দুটি কান ও চারটি পা। তার ছিল বিশাল একটা মুখ, আর তার দাঁতগুলো ছিল ভীষণ ধারালো। সেই কুমিরের সারা দেহে ছিল খসখসে শক্ত চামড়া আর ছিল বিশাল লম্বা একটা লেজ। সেই লেজে ছিল খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা···

শিক্ষক স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। পাতার পর পাতা শুধু খাঁজকাটা লেখা। এই ছেলেকে যা-ই লিখতে দেওয়া হয়, তা-ই সে কুমির বানিয়ে ফেলে। ভাবতে বসলেন শিক্ষক, ‘নাহ্‌, এবার এমন কিছু নিয়ে লিখতে দিতে হবে, যাতে সে কুমির আনার সুযোগ না পায়।’ ডাকলেন তিনি ছাত্রকে, “এই পণ্ডিত, এদিকে আয়, কালকে তুই ‘পলাশীর যুদ্ধ’ নিয়ে রচনা লিখবি।” ‘কিন্তু স্যার, পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে আমি তো কিছুই জানি না। আমাকে কিছুটা বলে দিন, বাকিটা আমি লিখতে পারব।’

শিক্ষক বললেন, ‘পলাশীর যুদ্ধ হয় ১৭৫৭ সালে, তখন বাংলার নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। নবাবের সৈন্যসংখ্যা ইংরেজদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি থাকলেও তিনি তাঁর সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় হেরে গেছেন যুদ্ধে। নবাব জানতেন যে মীরজাফর বিশ্বাসঘাতক, তার পরও তাঁকে যুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে রাখাটাই ছিল তাঁর মস্তবড় ভুল···”

এতক্ষণে ছাত্র চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, ‘হইছে স্যার, আমি পারমু বাকিটা। কাইলকাই আপনারে পলাশীর যুদ্ধ রচনা লেইখ্যা দিমু।’ শিক্ষক মনে মনে সন্তুষ্ট, বাপধন, এইবার তুমি কুমির পাইবা কই···
পরদিন ছাত্র ‘পলাশীর যুদ্ধ’ রচনা লিখে এনে দিল শিক্ষকের হাতে। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে পড়তে শুরু করলেন তিনি।

বাংলার বিখ্যাত পলাশীর যুদ্ধ হয় ১৭৫৭ সালে। তখন বাংলার নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। নবাবের সৈন্যসংখ্যা ইংরেজদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি হলেও তিনি তাঁর সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় হেরে গিয়েছিলেন যুদ্ধে। নবাব জানতেন যে মীরজাফর বিশ্বাসঘাতক। তার পরও তাঁকে সেনাপতি হিসেবে বহাল রেখে তিনি খাল কেটে কুমির এনেছিলেন। সেই কুমিরের ছিল দুটি চোখ, একটি নাক, দুটি কান ও চারটি পা। তার ছিল বিশাল একটা মুখ আর দাঁতগুলো ছিল ভীষণ ধারালো। সেই কুমিরের সারা দেহে ছিল খসখসে শক্ত চামড়া আর ছিল বিশাল লম্বা একটি লেজ। সেই লেজে ছিল খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা ···

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯

Share


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

পদ্ম
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com