Breaking News :

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোথায়? অনুসন্ধান আল-জাজিরার

নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।সেখানে বলা হয়েছে, আগস্টের শুরু থেকে আত্মগোপনে রয়েছে সংগঠনটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। তারা বেশ কয়েকজনের সাক্ষাতকারও নিয়েছে। 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর আত্মগোপনে চলে যান দলের অনেক নেতাকর্মী। তাদের অনেকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারও হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে নিষিদ্ধ করা হয় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ।

আল-জাজিরা ফাহমি নামের এক ছাত্রলীগ নেতার সাক্ষাতকার নেয়। ২৪ বছর বয়সী এই যুবকের ছদ্মনাম ব্যবহারর করে তারা। ফাহমি জানান, গত সরকারের আমলে তিনি অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে চলাচল করলেও এখন লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেই আমি ছিলাম কর্তৃপক্ষের মানুষ। আর এখন আমাকে আসামির মতো পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমার আর কোনো ভবিষ্যতও নেই।’

ফাহমির মতো পরিস্থিতিতে আছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সুবিধা নিয়ে যারা একসময় ক্যাম্পাসে দাপট দেখিয়ে বেড়াতো, এখন তারা পলাতক।

ক্যাম্পাসের সাবেক ক্ষমতাশালী, রাজপথে আওয়ামী লীগের পেশিশক্তি হিসেবে পরিচিত এসব ছাত্র এখন উচ্ছেদ, প্রতিশোধ, এমনকি কারাবাসের মুখোমুখি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ দমনচেষ্টা এবং তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য তাদের আজ এই দশা।

ফাহমি বলছেন, হাসিনাবিরোধী বিক্ষোভকালে জনগণের বিরুদ্ধে সরকারের প্রাণঘাতী দমন–পীড়নে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, ‘আমার বোনেরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। আমিও মনে করতাম, দাবি সঠিক। কিন্তু আমি দলীয় বাধ্যবাধকতায় আটকা পড়েছিলাম।’

সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটাব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির জেরে গত জুলাইয়ে প্রাণঘাতী এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল। বিক্ষোভ একটা সময় সহিংস হয়ে উঠে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের দমন-পীড়নের জেরে সহস্রাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। একটা সময় সরকারের পতন হয়। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পতনের পরও সহিংসতা থামেনি। এবার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নতুন টার্গেটে পরিণত হয়। তাদের অনেককে হত্যা করা হয়। অনেকে পালিয়ে যায়।

ফাহমি দাবি করেন, তিনি ভালো শিক্ষার্থী ছিলেন। রাজনীতি নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতেন না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল রাজনীতি এড়ানো সম্ভব না। হয় রাজনীতিতে যোগ দিতে হবে, নাহলে ভুগতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক সময় পরিবারের চেয়ে দলকে বেশি প্রাধান্য দিতে বাধ্য হয়েছি। অথচ এখন শেখ হাসিনা ভারতে নিরাপদ আছেন, আর আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রী শাহরিন আরিয়ানা গত ১৮ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়। পরীক্ষার হল থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুল হান্নান মাসুদ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ বাংলাদেশ কাজ করতে পারে না। তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

ভারতের পালিয়ে থাকা খালিদ মাহমুদ চৌধুরি আল-জাজিরাকে বলেন, এই সরকার দাবি করে যে তারা বৈষম্যবিরোধী সমাজ করছে। কিন্তু তারা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষার অধিকারই কেড়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছাত্রসংগঠন। তাদের সদস্য সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। এত শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে তারা সুন্দর বাংলাদেশ কীভাবে প্রত্যাশা করছেন। ’

তবে ড. ইউনূসের উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার আল-জাজিরাকে বলেন, নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রমে যোগদানের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই স্বাধীন, যদি না তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ থাকে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের আধিপত্যের সময় ক্যাম্পাসে যে সহিংসতা ছিল সাধারণ ঘটনা, নতুন বাংলাদেশে তার পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়। সহিংসতার সম্মুখীন না হয়ে সব শিক্ষার্থী যাতে স্নাতক করতে পারেন, তা নিশ্চিত করাই কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com