নতুন পরিচয়ে আবার ঢাকায় এসেছেন বহুল আলোচিত ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন পিটার হাস। সেই পরিচয়েই চলতি সপ্তাহে ঢাকায় আসেন হাস।
ঢাকায় এসে এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার এক্সিলারেট এনার্জির প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন তিনি। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন এক্সিলারেট এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান স্টিভেন কোবোস।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিসে ৩৩ বছরের কর্মজীবনের ইতি টানেন। তিন দিনের মাথায় ১ অক্টোবর তিনি জ্বালানি কোম্পানির উপদেষ্টা হিসেবে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করেন।
কূটনীতির ক্যারিয়ারে জীবনের শেষ পদায়নে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন পিটার হাস। গত ২২ জুলাই সোমবার মধ্যরাতে নির্ধারিত মিশন শেষে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান বহুল আলোচিত এই মার্কিন কূটনীতিক। পূর্বসূরিদের মতো পিটার হাসও ছিলেন বাংলাদেশিদের কাছে বেশ পরিচিতি কূটনীতিবিদ।
নগর বিচ্ছিন্ন চায়ের দোকান কিংবা ঢাকায় পার্টি হেডকোয়ার্টার, কূটনৈতিক আড্ডা কিংবা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি সর্বত্রই আলোচনায় ছিলেন তিনি। মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে বাংলাদেশের বিষয়ে মার্কিন নীতি ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন’ ইস্যুতে রাজনীতিক ও আমলাদের অফিস-বাসায় এবং গণমানুষের কাছে ছুটে চলেছেন পিটার হাস। এসবের জন্য হয়েছিলেন তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরাগভাজন।ঢাকা ছাড়ার দুদিন আগে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের আমন্ত্রণে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত জরুরি কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে অংশ নেন হাস। যে ব্রিফিংয়ে সহিংসতার ১৫ মিনিটের একটি ভিডিও দেখিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করে সহিংসতা ও এতগুলো শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংসের জন্য বিরোধী মত বিশেষত বিএনপি-জামায়াতের ওপর দায় চাপানো হয়। যেখানে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষণ ছিল ভিন্ন।
ওই ব্রিফিংয়ে পিটার হাস বলেন, যে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে তা একপক্ষীয়। আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশন বিশেষত যেভাবে নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি-টিয়ারশেল ছোড়া হয়েছে তার তো কোনো ফুটেজ নেই।
২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হয়ে বাংলাদেশে আসেন পেশাদার কূটনীতিক পিটার হাস। প্রায় আড়াই বছরের ঢাকা মিশনে গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা প্রভৃতি ইস্যুতে কথা বলা এবং বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিকে যুক্ত করার লক্ষ্যে ব্যস্ত ছিলেন হাস। দায়িত্ব পালনকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তার দূতিয়ালি কতটা সফল ছিলো সেটি নিয়েও কূটনৈতিক অঙ্গনে চলেছে নানামুখী বিশ্লেষণ।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ২০২৩ এর শুরু থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরব ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অব্যাহত বার্তা দিয়ে যাচ্ছিল। ঢাকায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা প্রচারে বেশ সরব হতে দেখা যায় পিটার হাসকে। এ নিয়ে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সঙ্গে তার বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।