পাবনার ভাঙ্গুড়ায় শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের দিনে বিকালের দিকে উপজেলা প্রশাসনের পর্যবেক্ষণের সময় ওই স্থানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আওয়ামী লীগ নেতা উপস্থিত থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে তা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচনায় তারা লিখেছেন ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকারের একজন প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কিভাবে এখনো প্রশাসনের সান্নিধ্যে থাকেন ?
বিজয়া দশমীর দিনে রবিবার (১৩অক্টোবর) বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ নাজমুর নাহার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমীয়া আক্তার রেজি ও ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলামের পাশে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাকী বিল্লাহকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এমন একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেলাল উদ্দীন হেলাল তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে লিখেছেন ‘উপজেলা প্রশাসনের দ্রুত সংস্কার চাই‘। ওই পেস্টে কমেন্ট করে নিজেরে মতামত ব্যক্ত করেছেন অনেকে ।
হেলাল উদ্দীন হেলাল আরও লেখেন- ‘ প্রকাশ্যে এই অবস্থা’। আশরাফুল ইসলাম ফরিদ কমেন্টে লেখেন-‘আওয়ামীলীগের দোসর , এখানো আছে।’ আলহাজ আহম্মেদ আলমাস কমেন্টে লেখেন-‘ এটা তো আওয়ামীলীগের দোসর।’ রেজাউল রেজা নামের একজন তার কমেন্টে লেখেন-‘ এটা তো লুচ্চা মার্কা তাকানো।’ এস আর টি শিহাব লেখেন-‘ আমার তো মাথাই চলে না ।’ রাসেল রানা নামের একজন লেখেন- ‘প্রশাসনে আছে আওয়ামী লীগের পা চাটা চামচার এখন নিজেদেরকেই প্রশাসন হতে হবে।’ সোহানুর রহমান নামের একজন লেখেন-‘ভাঙ্গুড়ার বিএনপি’র রাজনীতি যে দুর্বল এই ছবি আবারো সেটা প্রমাণ করে। আওয়ামী লীগ এর শাসন আমলে কোন বিএনপির নেতা এই রকম সুযোগ পেতনা আওয়ামীলীগ এর নেতা কর্মী নয় প্রশাসন এর লোক ই বসতে দিতো না ।’ বিএ জসিম নামের একজন লেখেন-‘ এমন প্রশাসনের দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা চাই এবং অপসারণ চাই।’
জানা গেছে,বাকী বিল্লাহ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান জেলা আওয়াামী লীগের সদস্য।
এছাড়াও তিনি ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের গত ১৬ বছরে বাকী বিল্লাহ এসব দায়িত্ব পালন করেন এবং বিভিন্ন সভা সমাবেশে বিএনপি- জামায়াত বিরোধী উৎসকানীমূলক বক্তব্য দিয়ে নিজেকে শেখ মুজিবের আদর্শের সৈনিক দাবী করতেন। ২০০৯ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন এরপরে ২০১৪ সালে বিএনপির প্রার্থী নূর মুজাহিদ স্বপনের কাছে চেয়ারম্যান পদে শোচনীয়ভাবে হেরে যান। এর পর ২০১৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন বাকী বিল্লাহ। এর আগে তিনি পৌরসভার মেয়র ও ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হন বাকী বিল্লাহ। তবে এমপি পুত্র গোলাম হাসনাইন রাসেল প্রার্থী হওয়ায় পরাজয়ের শঙ্কায় শেষ পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বাকী বিল্লাহ। ওই সময়ে বিভিন্ন সভা, মিছিল ও সেমিনারে জামায়াত বিএনপি বিরোধী উৎকানীমূলক বক্তব্য দিয়ে নিজেকে সম্মুখ সারির একজন আওয়ামীলীগ নেতা দাবী করেছেন।
এদিকে গত ৫ আগস্টে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই উপজেলার অধিকাংশ আওয়ামী লীগের নেতাই আত্মগোপনে চলে যান। তাদের অনেক নেতা এখানো ভাঙ্গুড়ায় ফেরে নি। আওয়ামী লীগ নেতা বাকি বিল্লাহ ৫ আগস্টের পরেও ভাঙ্গুড়াতে প্রকাশ্যে অবস্থান করছেন। ৫ আগস্টের পরে সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে গেলে বাকি বিল্লাহ ভাঙ্গুড়াতে অবস্থান করায় চরম হতবাক হয়েছেন অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা।
ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাজমুন নাহার বলেন, ‘এটা আমার আয়োজন করা প্রোগ্রাম না । ওপেন প্লেসে হিন্দু ধর্মের একটা উৎসব , সবার জন্য উন্মুক্ত, কেউ এসে বসলে তাকে উঠিয়ে দিবো কিভাবে । তবে বসার আগে উনারই চিন্ত করা উচিত ছিলো। ’