পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ৫ দোকান-বাড়িতে ডাকাতি: ৪০ ভরি সোনা,২০ লক্ষ টাকা লুট
ভাঙ্গুড়ায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ১৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা চুরি ! এক মাসে আটক নেই আসামী অভিযোগ

ভাঙ্গুড়া(পাবনা)প্রতিনিধিঃ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ব্যাংকার বান্ধবীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বান্ধবীর ১৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ ১২ হাজার টাকা চুরি করে উধাও হওয়ার ১ মাসেরও অভিযুক্ত শিক্ষক ইফফাত মোকাররমা সানিমুন (৩২)কে আটক করতে পারে নি পুলিশ । এ ঘটনায় তারই বান্ধবী ও ব্যাংকার তানিয়া হক শনিবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত ইফফাত মোকাররমা সানিমুন উপজেলার সোহরাব হোসেন এর মেয়ে ও পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের আরাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা। অপরদিকে অভিযুক্তরা ব্যাংকার তানিয়া হক ও তার ভাইকে মামলা দিয়ে হয়রানি করারও হুমকি প্রদানর করা হচ্ছে মর্মে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগও করেন ভুক্তভোগী। তবে পুলিশ বলছেন, আসামীকে আটকের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। হুমকির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ব্যাংকার তানিয়া হক বলেন,তারই বান্ধবী সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন । গত ০৫/০৭/২০২৫ খ্রি. বিকালের দিকে তিনি ও তার বান্ধবী সানিজা ইয়াসমিন পপি সহ বিবাদী বিকেলে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গহনা পড়ে সেজেগুজে চাটমোহর থানাধীন কুটুম বাড়ি রেস্টুরেন্টে বেড়াতে যান। উক্ত স্থান থেকে এসে পূনরায় রাতে তিনি তার গহনাগুলো ১০০% আলমারীতে দেখেন। গহনাগুলো দেখার সময় সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন তার ঘরে উপস্থিত ছিল। গত ০৫/০৭/২০২৫ খ্রি. রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনিসহ উক্ত বান্ধবী রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমানোর পূর্বে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন তানিয়া হকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে কফি বানিয়ে খাওয়ায়। উক্ত কফি খাওয়ার পর ব্যাংকার তানিয়া হকের মাথা ব্যাথা শুরু হয় এবং গভীর ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ০৬/০৭/২০২৫ খ্রি. সকাল অনুমান-১০.০০ ঘটিকার সময় ঘুম থেকে উঠে তার বান্ধবীকে ঘরে দেখতে না পেয়ে তার সাথে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন । এ সময় অপর প্রান্ত থেকে তার বান্ধব মোকাররমা সানিমুন প্রথমে ফোন রিসিভ না করায় তানিয়া হকের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন জানায় যে,তার জরুরী কাজ রয়েছে। সেই জন্য সে বাস যোগে ঢাকায় চলে যাচ্ছে। অতঃপর তানিয়া হকের হাত ব্যাগে লক্ষ্যে দেখেন যে, তার হাত ব্যাগের ভিতরে থাকা নগদ-১২,০০০/-টাকা নেই। তখন তার সন্দেহ বেড়ে যায় এবং তার ঘরের আলমারীতে থাকা স্বর্ণের গহনা গুলো পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা করে দেখি যে, আলমারীতে থাকা স্বর্ণের ২ভরি ৮আনা ওজনে ০১ জোড়া চুর, যার মূল্য অনুমান-৩,৬০,০০০/-টাকা, স্বর্ণের ০৪ ভরি ওজনের ০২ টি হার, যার মূল্য অনুমান-৬,৬০,০০০/-টাকা, স্বর্ণের ০১ ভরি ওজনের কানের দুল ০১ জোড়া, মূল্য-১,৮০,০০০/-টাকা, স্বর্ণের ০৩ টি ছোট কানের দুল ০৩ জোড়া, যার ওজন-০২ ভরি, মূল্য টাকা, ১ ভরি ২ আনা ওজনের স্বর্ণের একটি চেইন, মূল্য অনুমান-২,০০,০০০/-টাকা এবং ০২ ভরি ওজনের স্বর্ণের বেসলেট ০২টি, মূল্য অনুমান-৩,৬০,০০০/-টাকা, ০৬ টি স্বর্ণের আংটি, যার ওজন-০২ ভড়ি, মূল্য । অনুমান-৩,৬০,০০০/-টাকা গহনার বাক্সের ভিতরে নেই। এর পর অনেক বার সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ফোন করলেও আর তিনি তার মোবাইল ফোন রিসিভ করেন নি। এ বিষযে তার পরিবারের ভাই এবং পিতার সাথে যোগা যোগ করা হলেও তারা জানান সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন এর সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
এ ঘটনায় গত ৯ আগস্ট ব্যাংকার তানিয়া হক বাদী হয়ে ভাঙ্গুড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মাললার এক মাস পার হলেও আসামীকে পুলিশ আটক করতে না পাড়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। পক্ষান্তরে অভিযোগের পর ব্যাংকার তানিয়া হক ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আসামী পক্ষ থেকে উল্টা মামলা করে আরও হয়রানি করা হবে বলে হুমকি প্রদান করেছেন। এমতাবন্থায় আসামীকে দ্রুত সময়ে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হারানো গহনা ও টাকা উদ্ধার করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান। সংবাদ সম্মেলনের সময় তানিয়া হকের পিতা এনামুল হক ও তার ভাই মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যপারে জানতে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সেকেন্দার আলী জানান, সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন প্রায় এক বছর ধরে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আছেন। মাঝে মাঝে এসে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে আবার ছুটি নেন। ছুটি না দিলে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ফোন করিয়ে ছুটি নেন। এমন দীর্ঘ দিন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতে তারাও কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় আছেন।
এ ব্যপারে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আসামীদের ধরতে সর্বোচ্চ তৎপর চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোনো সময় আসামী ধরা পড়বেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ঘটনার বিষয়ে সহকারি পুলিশ (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আক্তার বলেন, অভিযোগ হওয়ার পর আসামী সাধারণত গা ঢাকা দেয়। আসামী যেহেতু ঢাকাতে থাকে। সে কারণে তাকে ধরতে একটু সময় লাগছে। পুলিশ সেখানেও অভিযান চালিয়ে ধরার চেষ্টায় অব্যহত আছে।