বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা,কূলে একা বসে আছি নাহি ভরসা। রাশি রাশি ভাড়া ভরা ধান কাটা হল সারা, ভরা নদী ক্ষুর ধারা খরপরশা। কাটিতে কাটিতে ধান এলো বরষা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সোনার তরী কবিতার কয়েকটি পংক্তি। কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা সোনার তরী কবিতার এই পঙক্তির সাথে যেন পুরোপুরি মিলে গিয়েছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার শতশত বিঘা কৃষকের জমির পাকা ধান কাটার বাস্তবতার প্রতিচ্ছবিতে। একদিকে পাকা ধান আগাম বন্যা পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে আগমন ঘটেছিল ঈদুল আযহার। ঈদ যেন এই এলাকার কৃষকের মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি। জন প্রতি ১০০০, ১২ শত কিংবা ১৪০০শত টাকাতেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। পাকা ধান কেটে রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলতে না পেরে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে, চলনবিধৌত উপজেলার দিলপাশার ও খানমরিচ ইউনিয়নের শত শত বিঘা কৃষকের পাকা ধান আগাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এই সকল এলাকার বিলাঞ্চল গুলিতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া এই পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের সোনারী রঙের পাকা ধান। একই সঙ্গে নিম্ন অঞ্চল গুলিতে আগাম বন্যার পানি প্রবেশ করার কারণে ধান কাটার শ্রমিকের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকের বছরের মধ্যে প্রধান আবাদ পাকা ধান ডুবে যাওয়ার দৃশ্য কৃষক যেন স্বচক্ষে দেখে তা সহ্য করতে পারছেন না। সেই পাকা ধান অনেকেই ঘরে তুলতে ছুটছেন শ্রমিকের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু শ্রমিক সংকটে ১০০০, ১২০০ কিংবা ১৪০০ শত টাকা গুণেও মিলছে না শ্রমিক। তাই অনেকে ঈদের দিনেও ধান কাটতে দেখা গিয়েছে। এদিকে ধীরে ধীরে বড়াল গুমানি ও কাটা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে । অনেকে পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধানের শুধু উপরের অংশটুকু কেটে নিয়ে পলিথিনের ভেলায় ভাসিয়ে শুকনো স্থানে নিয়ে আসছেন। এ অঞ্চলের কৃষকের বাৎসরিক প্রধান চাষাবাদ যোগ্য ফসল ধান পানিতে ডুবে যাওয়ার যেন কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম। এমন অবস্থা বিগত এক যুগেও সৃষ্টি হয়নি বলে অনেকে দাবী তাই কৃষকরা সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানী কিংবা কৃপার উপর নির্ভর করে তাকিয়ে আছেন।

দিলপাশার ইউনিয়নের ষাট বছর বয়সী কৃষক আফজাল উদ্দিন জানান, বেশ কয়েকদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি আবার ভারী বৃষ্টিও হয়েছে। সে কারণে ধান আগে কাটা যায়নি। আবহাওয়া ভালো হওয়ার আশায় বেশ কিছুদিন অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ করে গোমানী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগাম বন্যার পানি পাকা রাস্তা ধানের মাঠে প্রবেশ করেছে। এখন শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারছি না।
খানমরিচ ইউনিয়নের ময়দানদিঘী এলাকার কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, একদিকে যেমন মাঠে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, ঠিকমতো রোদ নাই ধান কাটলেও ধানের খড় ও ধান শুকানো নিয়ে খুব বিপদে আছি।
অপর কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, ধান পানির মধ্যে ধান কেটে কখনো ধানের আঁটি পানিতে ভাসিয়ে কখনো বা পলিথিনের ভেলায় শুকনোতে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমন আগাম বন্যার কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
এ ব্যপারে ভাঙ্গুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কৃষিবিদ শারমিন জাহান বলেন, আগাম বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল কিন্তু বর্তমানে এই অঞ্চালের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে অধিকাংশ ধান কৃষক কেটে নিয়েছেন। কিছু নিচু জমির ধান কৃষক শ্রমিক সংকটে কাটতে পারছেন না। ঈদ চলে গেলে হয়তো শ্রমিক মিলবে তখন এ গুলোও তারা কেটে নিতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করছেন তিনি।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বদরুল আলম -০১৭১২৯৫৭০৬৬,
নির্বাহী সম্পাদকঃ সফিক ইসলাম,-০১৭১৬৪৯২৪১৫,
বার্তা সম্পাদকঃ আব্দুর রহিম-০১৭১৫৮৪৪১৬২
Copyright © 2024 Protidinerjonopod