Breaking News :

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ ও এর সব সংগঠনের

বিশেষ প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার রাতে ইসির জরুরি বৈঠকে দলটির নিবন্ধন স্থগিতের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে বিকালে আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ওই প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে ইসি শুধু আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো ইসিতে নিবন্ধিত না হওয়ায় ওইসব সংগঠনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ইসির কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন স্থগিত থাকাবস্থায় জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ। এর আগে কয়েকটি দলের নিবন্ধন বাতিল হলেও এবারই প্রথম কোনো দলের নিবন্ধন স্থগিত করল ইসি।

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। সোমবার রাতে নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন জারি করেছি।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬ নম্বরে রয়েছে। দলটি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর নিবন্ধন পায়। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯টি।

সূত্র জানিয়েছে, এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন। এর আগে জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, পিডিপিসহ কয়েকটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল। তবে কোনো দলের নিবন্ধন এভাবে স্থগিত করার নজির নেই। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৯০ ধারায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলে ইসিকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। তবে নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত রাখার বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

ইসির গেজেটে বলা হয়েছে, যেহেতু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোন ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেহেতু নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন (নম্বর-০০৬) স্থগিত করল।

শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সোমবার বিকালে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপরই বিকাল সাড়ে ৫টার পর সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীনের কার্যালয়ে তার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, ইসির সিনিয়র সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তিন ঘণ্টার বেশি সময় চলা বৈঠকের পর কমিশনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এদিন নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার দিনে অফিস করলেও বিকালে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। ই-নথিতে নিবন্ধন স্থগিতের সিদ্ধান্তটি হয়।

এর আগে সকালে সিইসির কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন সিইসি ও তিন নির্বাচন কমিশনার। এদিন সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের কার্টার সেন্টারের প্রতিনিধিদল। ওই বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বিষয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, উই আর ওয়েটিং ফর দ্য গেজেট নোটিফিকেশন টু কাম। যখন দেখবেন আকাশে সূর্য উঠে গেছে, তখন পরিষ্কার হয়ে যাবে, অপেক্ষা করেন।

প্রজ্ঞাপন হলেই নিবন্ধন বাতিল সম্ভব কি না জানতে চাইলে এএমএম নাসির উদ্দীন বলেন, গণমাধ্যমের তথ্য শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। প্রজ্ঞাপন হলে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব। প্রজ্ঞাপনটা আসতে দেন। ডেফিনিটলি সাংবিধানিক সংস্থা। আমরাও এটা নিয়ে কনসার্ন। বাট, উই আর ওয়েটিং ফর দ্য গেজেট নোটিফিকেশন টু কাম।

নির্বাচনি আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটি নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়।

ওই বৈঠকের বিষয়ে সিইসি বলেন, প্রাক-নির্বাচনি ভিজিটে কার্টার সেন্টার একটা ধারণা নিতে এসেছে। নির্বাচন ইস্যুতে সব বিষয় প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চেয়েছেন। দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ইসির ওপরে মোটামুটি সব পক্ষের আস্থা আছে। তারা জানতে পেরেছে, এটা ভালো লেগেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি জানানো হয়েছে। আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসাবে তারা আসতে চান।

আ.লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল চেয়েছে গণঅধিকার পরিষদ : এর আগে দুপুরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে ইসিকে চিঠি দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) নেতারা। তারা আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী হিসাবে জাতীয় পার্টির নিবন্ধনও বাতিলের দাবি জানান। দলটির সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি জানান।

লিখিত আবেদনে বলা হয়, জুলাই গণহত্যায় জড়িত থাকার কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইভাবে তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর চালানো গণহত্যাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে গণহত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এছাড়াও দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ যে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে, তার অন্যতম সহযোগী ও বৈধতাদানকারী হিসাবে সক্রিয় ছিল জাতীয় পার্টিসহ জোটবদ্ধ বাকি দলগুলো। বিগত তিনটি একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছে ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টি।

দেশের মানুষের ওপর নির্মম বর্বরতা চালানো এবং ধারাবাহিক দুঃশাসনের প্রধান হোতা আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী প্রতিটি দলকে গণহত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দলীয় নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যথাযথ শাস্তির মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান প্রমুখ।

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com