পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ৫ দোকান-বাড়িতে ডাকাতি: ৪০ ভরি সোনা,২০ লক্ষ টাকা লুট
পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের কৃষকরা কম খরচে সেচ সুবিধা বঞ্চিত

মোঃ শফিউল আযম,বেড়া (পাবনা): পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের সেচখালগুলোতে পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ায় প্রায় ৮০ ভাগ চাষি বোরো আবাদে কম খরচে সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনটি ফসল আবাদের জন্য প্রতিবিঘা জমিতে মাত্র ১৮০ টাকা সার্ভিস চার্জ নিয়ে সেচ সুবিধা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেচ অবকাঠামো ক্রটিপূর্ণ হওয়ার কারণে চাষিরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার চাষিরা নিজ উদ্যোগে গভীর অগভীর নলকুপ বসিয়ে জমিতে সেচ দিতে বাধ্য হয়। এতে ফসল উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকল্পের সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সেচ সুবিধাভোগী চাষিদের তিনটি ফসল আবাদের জন্য বিঘাপ্রতি বছরে ১৮০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। এতে তাদের ফসল উৎপাদন খরচ পড়ে অনেক কম। অপরদিকে সেচ সুবিধা বঞ্চিত চাষিদের শুধুমাত্র বোরো ফসল উৎপাদনে পাম্প মালিককে সেচ বাবদ বিঘাপ্রতি দিতে হয় চার হাজার টাকা। এতে তাদের ফসল উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি পাম্পিং ষ্টেশন, ৪২ কিলোমিটার প্রধান সেচ (পানি সংরক্ষণাগার) খাল, ১৯টি সেকেন্ডারী খাল, ৪৭টি টারশিয়ারী খালও চার শতাধিক মাইনর খাল নির্মাণ করা হয়। ১৯৯২ সালে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। তখন থেকেই প্রকল্প কমান্ড এরিয়ার ৮০ ভাগ চাষি কাঙ্খিত সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এতে প্রকল্প কমান্ড এরিয়ার ১৮ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এনে বছরে অতিরিক্ত এক লাখ ৯১ হাজার টন ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
প্রকল্প এলাকার চাষিরা অভিযোগ করেছেন, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের কমান্ড এরিয়া বেড়া-সাঁথিয়া উপজেলায় গত বছর বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ১২৫ হেক্টর। সেচ সঙ্কটে আবাদ হয়েছিল মাত্র দুই হাজার হেক্টর। চলতি মওসুমে খাতা কলমে বোরোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ১৭৫ হেক্টর। যা গত বছরের চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি।
প্রকল্পটির সেচ সঙ্কটের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, সেচ ক্যানেল নির্মাণে মাটি কম্প্যাক্ট না করা, জমির লেবেল থেকে ক্যানেলের বেডলেবেল অনেক নিচু হওয়ায় পানি ওভারফ্লো করতে হয়। এতে পানির চাপে ডাইক বাঁধ ভেঙ্গে যায়। বর্তমানে সচল ক্যানেলগুলো যথাযথভাবে সংস্কার না করায় অকার্যকর হয়ে পড়ছে। পেঁচাকোলা, হরিরামপুর, বায়া, পানশাইলসহ অনেক এলাকায় সেচ ক্যানেল মাটির সাথে মিশে গেছে। অনেকে ক্যানেল ভরাট করে দোকানপাট গড়ে তুলেছে। বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগ কিছু কিছু এলাকায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র দাবি করেছে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সরকারি বরাদ্দকৃত এডিবির ৩০০ কোটি টাকার কাজ নামমাত্র করে এপেনডিক্স-৪ ও ৫ এর মাধ্যমে শিংহভাগ টাকা আত্মাসাত করা হয়েছে। এরফলে গত ৩৩ বছরে প্রকল্প কমান্ড এরিয়ায় সেচ লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৬৮০ হেক্টরের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় সেচের জমি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫০০ হেক্টর। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার যে বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগ কর্তৃপক্ষ গত ৩৩ বছরেও পাবনা সেচ প্রকল্পের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে কোন মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেনি।
পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের কমান্ড এরিয়াভূক্ত বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ, হরিরামপুর, কৈটোলা, নতুন পেঁচাকোল, মাছখালি, সাঁথিয়া উপজেলার গাগড়াখালী, ছেচানিয়া, বড়গ্রাম, বোয়াইলমাড়িসহ ৪০টি গ্রাম সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অনেক এলাকায় সেচ ক্যানেল মাটির সাথে মিশে গেছে। অনেকে ক্যানেল ভরাট করে দোকানপাট গড়ে তুলেছে। এদিকে বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগ কিছু কিছু এলাকায় অবধৈ দখল উচ্ছেদ করেছে। গত ৩৩ বছর ধরে গ্রামগুলোর চাষিরা প্রকল্পের সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তারা মাঠে নিজ নিজ উদ্যোগে সেচযন্ত্র স্থাপন করে বোরো ধান চাষ করে আসছেন। এতে প্রতিবিঘা জমিতে বোরো উৎপাদনে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হবে বলে চাষিরা জানিয়েছেন।
পানি ব্যবহারকারি সমিতির সভাপতি আনছার আলী জানান, প্রকল্পের সেচ সুবিধাভোগী চাষিদের তিনটি ফসল আবাদের জন্য বিঘা প্রতি বছরে ১৮০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। এতে প্রকল্পের সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত কৃষকদের ফসল উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়ছে। অপরদিকে সেচ সুবিধা বঞ্চিত কৃষকদের শুধুমাত্র বোরো উৎপাদনে সেচ বাবদ চার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
বেড়া পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এই ইরিগেশন প্রজেক্টটি পুরোদমে চালু করার জন্য পরিকল্পিতভাবে সেচ ও নিস্কাশন ক্যানেলসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কার সাধন করতে হবে। তবেই পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পে ফসল উৎপাদনের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।