ভাঙ্গুড়া(পাবনা)প্রতিনিধিঃ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় এবছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় আশায় বুক বেঁধেছে কৃষক। বর্ষার পরেই শীত মৌসুমের অন্যতম ফসল হিসেবে সরিষার চাষ এই অঞ্চলে কৃষকের একটি লাভজনক ফসল। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষক মাঠে সরিষার চাষ করেছেন। এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশও আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকূল হওয়াতে রোগবালাই তেমন আক্রমণ করেনি। ফলে কোন ধরনের বাড়তি খরচ কিংবা ঝামেলা ছাড়াই কৃষক সরিষার ভালো ফলন পাবে বলে আশা করছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক থাকলে অল্পদিনের মধ্যেই সরিষা তুলে বোরো চাষে নামবে কৃষক। সরিষার ফলন ভালো হলে বাজারে তেলের দাম কিছুটা কমবে বলেও ধারণা করছে অনেকে।
বর্ষার পরেই ঘন কুয়াশার চাঁদর মুড়ি দিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও এসেছে শীত ঋতু। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই উপজেলার দিলপাশার, খান মরিচ, অষ্টমনিষা,পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে শত বাঁধা উপেক্ষা করে কৃষকরা বুকভরা আশা নিয়ে আবাদ করেছে সরিষা।
ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রত্যেকটি মাঠে গেলেই চোঁখে পড়ে মাঠের পর মাঠ সরিষার ক্ষেত। যেদিকে দুচোখ যায় শুধু পাকা হলুদের সমারোহ এরই মধ্যে অধিকাংশ জমির সরিষার হলুদে ফুল ঝরে গিয়েছে । সরিষার ফলে দানা পোক্ত হতে শুরু করেছে। ধান চাষ করা জমিতে অল্প সময়ের জন্য সরিষা চাষ করে কৃষক ভালো লাভবান হয় বলে এই আবাদের প্রতি অনেকেরই আগ্রহ থাকে। বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগ অতিবৃষ্টি ঘন কুয়াশা দিনের পর দিন লেগে থাকলে সরিষার আবাদ প্রতিকুল অবস্থায় থাকে। আর সে কারণে সরিষার ক্ষেত্রে রোগবালাই কীটপতঙ্গ লেগে সরিষার ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু এ বছর একদিকে যেমন অতিবৃষ্টি নেই অন্যদিকে তেমনি দীর্ঘদিন ঘন কুয়াশাও কৃষকের মাঠের সরিষার কে ক্ষতি করতে পারেনি। পাশাপাশি কীটপতঙ্গ কৃষকের সরিষার মাঠে এমন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারেনি। মূলত সে কারণেই কৃষকরা যেখানেই সরিষার আবাদ করেছেন সেখানেই ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, এই উপজেলার খানমনিচ, দিলপাশার ও অষ্টমনিষা ইউনিয়নের অধিকাংশই চলনবিল বিধৌত এলাকার অন্তর্গত। বর্ষাকালে বর্ষার পানিতে প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি বহন করে নিয়ে আসে। বর্ষায় বহনকৃত ওই পলিমাটি গুলি এই অঞ্চলের কৃষি জমি গুলিকে প্রচুর উর্বর করে থাকে। সে কারণে বর্ষা চলে যাওয়ার পর পরই সরিষাসহ যেকোনো আবাদ করলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে কৃষকের ফসলের সঙ্গে আশীর্বাদ রূপে দেখা দেয়।
উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের বিশাকোল গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবছর সরিষা ভালো হয়েছে এবং বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে যদি ভালো থাকে তাহলে বিগত বছরের তুলনায় এবছর প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৮ মন হারে ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং সেই সরিষা বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়ে বোরো ধান লাগানোর খরচ হওয়ার পরও নিজেদের খরচ চালানো যাবে। পাশাপাশি তেলের চাহিদাও কিছুটা মিটবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানান, কুয়াশা ও প্রচন্ড শীত থাকলেও সরিষার ফলন ভাল হয়েছে। এছাড়া এ উপজেলা মাটি সরিষার আবাদের জন্য বিশেষ উপযোগী। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরিষা চাষীদের যথাযথ পরামর্শ ও সহযোগীতা করছেন মাঠে থেকে ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানান, টরি ৭, কল্যাণীয়, সোনালী, বারি ৭, বারি ৮, বারি ৯, বারি১০ সহ বিভিন্ন জাতের এ উপজেলায় এ বছর প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় দশ হাজার মেট্রিক টন সরিষাও উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সরিষা চাষে করণীয় বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে আসছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শারমিন জাহান জানান, এবছর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক মৌচাকীরা ভাঙ্গুড়া উপজেলার সরিষার মাঠে খামার বসিয়েছিলেন। সরিষার ফুলে মৌমাছি মধু আহরণ করলে পরাগায়ন ভালো ঘটে। সে কারণে বিগত বছরের তুলনায় এবছরে এই উপজেলায় সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে প্রায় দশ হাজার মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বদরুল আলম -০১৭১২৯৫৭০৬৬,
নির্বাহী সম্পাদকঃ সফিক ইসলাম,-০১৭১৬৪৯২৪১৫,
বার্তা সম্পাদকঃ আব্দুর রহিম-০১৭১৫৮৪৪১৬২
Copyright © 2024 Protidinerjonopod