শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
দু’চোখ যতদুর যায়, মাঠের পর মাঠ শিম আর শিম। কৃষক পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই ক্ষেতে শিম পরিচর্যায় ব্যস্ত। এ চিত্র সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পাবনা সদর, আটঘয়িা ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলায় শিমের আবাদ হয়, তবে খুবই কম। আর মাঠে মাঠে এখন চলছে শিম তোলা ও পরিচর্যা। চলতি মওসুমে পাবনা জেলায় চার হাজার হেক্টর জমিতে শিম আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে এক লাখ ২০০ টন।
আগাম জাতের শিম আবাদ করে ভাগ্য বদলেছে আলহাজ উদ্দিনের। কিনেছেন জমি, হয়েছে নতুন ঘর। অভাব যেন পালিয়ে গেছে। পাবনার আটঘড়িয়া উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের এই শিমচাষি অবস্থা পাঁচ বছর আগেও ভাল ছিল না। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে টানাটানির সংসার ছিল। বছর পাঁচেক আগে গ্রামের বিভিন্ন জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করতে দেখে তিনিও তার পাড়ির পাশে এক বিঘা জমিতে শিমের আবাদ শুরু করেন। সেই থেকে শুরু, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাত্র পাঁচ বছরেই পাল্টে গেছে তার সংসারের চিত্র।
আটঘড়িয়া উপজেলার নাদুরিয়া গ্রামের একাধিক চাষি জানান, এসব জমি ধান চাষের উপযুক্ত নয়। তাই তাদের মতো অনেকেই শিম চাষ বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আলহাজ উদ্দিনের মতো আগাম জাতের শিম চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে পাবনা জেলার অনেক কৃষকের।
শীতের আগাম সবজি হিসেবে দুই মাস আগেই বাজারে উঠেছে শিম। অটো ও রুপবান নামে দুই রকমের শিমের বেশ চাহিদা রয়েছে। দামও ভাল পাচ্ছেন চাষিরা। শুরুতে পাঁচ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দাম কমে তিন হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আটঘড়িয়ার মন্ডল পাড়ার কয়েকজন শিম চাষি জানান, তারা প্রায় প্রায় ১৮ বছর বেশি নিজেদের বীজ থেকে তাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রায় তিন হাজার পরিবার শিম আবাদ করছেন। তাদের মতে, বিভিন্ন গ্রামে সুখের বাতাস বাইছে শিম চাষের কারণে। মন্ডলপাড়ার তোফাজ্জল, ফকরুল, আতাই, কামাল শিম ক্ষেকে মরা ফুল ও পোকা বাছাইয়ের কাজ করছিলেন। তারা প্রত্যেকেই এবার তিন বিষা কওে জমিতে শিম চাষ করেছেন। বীজ বপণ থেকে শুরু করে বাজারে শিম তোলা পর্যন্ত বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। তারা আশা করছেন, খরচ বাদ দিয়ে প্রতি জনের লাভ হবে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা।
ক্ষেত পরিচর্যা ও নতুন শিম তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। শিম কেনাবেচার জন্য গ্রামে গ্রামে বসেছে অস্থায়ী বাজার। এসব বাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত নছিমন-করিমন ও ট্রাকবোঝাই শিম যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটবাজারে। খিদিরপুর গ্রামের পাইকারি শিম ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানান, এই এলাকার শিম ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পাঠানো হয়। এক মাস আগে থেকেই নতুন শিম পাঠানো শুরু হয়েছে। খুচরা বাজারের শিমের দাম ও চাহিদা ভাল আছে।
উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম শিমের আড়ত ঈশ্বরদীর মুলাডুলি গিয়ে দেখা যায়, আড়তের পুরো জায়গায় ক্রয়কৃত শিম স্তুপ করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি স্তুপে আছে শত শত মণ শিম। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের এলাকায় শিম রাখা হয়েছে। অন্যান্য এলাকার আড়ত সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বসলেও মুলাডুলিতে আড়ত বসে সপ্তাহের সাতদিনই।
মুলাডুলির সফল শিম চাষি আমিনুর রহমান বাবু ওরফে শিম বাবু জানান, মুলাডুলির আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ ট্রাক শিম বাজারজাত করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। শিম কেনা-বেচার কাজে মুলাডুলির আড়তগুলোতে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে জীবিকা নির্বহ করে।
শিম চাষ করে একটি এলাকার মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে ঈশ্বরদীর মুলাডুলি তার উৎকুষ্ট উদাহরণ। শুধুমাত্র শিম চাষ করে লাখপতি হয়েছেন এমন মানুষ শুধু মুলাডলিতেই রয়েছে শতাধিক। এক হিসেবে জানা গেছে, পাবনা সদর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম ও লালপুরের প্রায় ২৪ হাজার মানুষ এই শিম চাষের সাথে সরাসরি জড়িত।
এ বিষয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, শিমের ফলন বাড়াতে ও পোকামাকড় দমনে চাষিদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানাভাবে তাদের পাশে রয়েছেন তারা। এবার বৃষ্টিতে ও ফুলে পচন রোগে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তারপরও কৃষকরা সচেতন রয়েছে, কৃষি বিভাগ পাশে রয়েছে। কিছুটা ক্ষতি হলেও ভাল দামের কারণে পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষক।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বদরুল আলম -০১৭১২৯৫৭০৬৬,
নির্বাহী সম্পাদকঃ সফিক ইসলাম,-০১৭১৬৪৯২৪১৫,
বার্তা সম্পাদকঃ আব্দুর রহিম-০১৭১৫৮৪৪১৬২
Copyright © 2024 Protidinerjonopod